নিউজ ক্লাবে সুর ও ছন্দ

নিউজ ক্লাবে সুর ও ছন্দ
অরবিন্দ সরকার
কইগো সুখচাঁদ বাবু আছেন। দরজায় কড়ানাড়ার শব্দ। সুখচাঁদ বাবুর গৃহিণী জানালা ফাঁক করে দেখলেন একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে গৃহিণী ভেতরে আসতে বললেন। বললেন কলিং বেল বাজালেই তো শুনতে পেতাম। দুপুর বেলা ঠকঠক্ শব্দ করতে নেই। এতে বাড়ীর অমঙ্গল হয়, তাছাড়া লক্ষ্মী দেবী বিরাগভাজন হন্।
ভোম্বল বললো – বিদ্যুৎ সংযোগ করা জিনিষে হাত দিতে নেই। অপমৃত্যু মরা মহাপাপ। চিরদিন ভূত হয়ে বেঁচে থাকতে হবে ? মানুষ হয়ে জন্মলাভ বা স্বর্গলাভ হবে না। তাছাড়া কোথায় কলিং বেল আছে জানবো কি ক’রে?
গৃহিণী – ওই তো চৌকাঠের ওপরের কোনে রয়েছে! একবার টিপলেই বাড়িতে মিউজিকের শব্দ।
ভোম্বল – সর্বত্র মিউজিক,এ যে মিউজিকের মিউজিয়াম।
যার জন্য এলাম এখানে বলতে তিনি কই?
সুখ চাঁদবাবুর গৃহিণী বললেন, উনি বাজারে গেছেন একটু, অবশ্য ফিরতে দেরি হবে। কেনাকাটা আছে, বাড়ীতে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হবে,তাই তিনি ব্যস্ত! আপনি বলুন কি বলবেন? আমি উনাকে বলে দেবো, নতুবা মোবাইল নাম্বার দিন উনি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবেন।
ভোম্বল – এতেই তো গুষ্টির ষষ্ঠী পুজা হয়েছে। মোবাইল মানুষকে অলস করে দিয়েছে। এক পা হাঁটে না কেউ? সব মোবাইলে অর্ডার আর বাড়ীতে হাজির। আমার সব্জি ক্ষেতের ফসলের আড়ালে মোবাইলে লুকোচুরি খেলা হয়। আমার লজ্জা লাগে, দুপা পিছিয়ে আসি লজ্জায়। আর ওদের যারা আসে ছেলে মেয়ে সব দুকান কাটা নির্লজ্জ বেহায়া। কি সব ইনিয়ে বিনিয়ে ছলচাতুরি মিথ্যা কথার ফুলঝুরি চলে। সবাই যেন জমিদারের ঘরের ছেলে মেয়ে? কেউ কম যায়না ওরা। সূয্যি ডুবে গেলেও ওদের আসর ভাঙ্গে না। আমাদের আমলে এসব ছিলো না। লোকলজ্জা ছিলো, গুরুজনদের ভয়ভীতি ছিলো। এখন গুরুজনেরা লুকিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চোখ আড়াল করে পিছিয়ে পিছিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। গন্তব্য স্থলে যাওয়ার রাস্তা ওদের জন্য অবরোধ।
যে কথা বলতে এসেছি সেটা বলেই ফেলি তাহলে! সুখচাঁদ বাবু গঙ্গার ওপারে মাষ্টারী করেন,গরু গাধা পিটিয়ে মানুষ করেন, সবাইকে যদি লেখাপড়া শেখান তাহলে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হবে। রাখাল মাহিনদার মুনিশ পাওয়ায় মুস্কিল। বলবেন বাড়ীর কাজে মন দিতে। বেশি বেশি পড়ালে কি মাইনে বেশি দেবে? তার চেয়ে বরং ওখানে হাজিরা দিয়ে গল্প গুজব করে কাটিয়ে দিতে বলবেন! দিনকাল কি যে এলো , কাজের লোক পাওয়া ভীষন অসুবিধা এই সব আপনাদের সুখ চাঁদ বাবুর মতো মাষ্টার স্কুলে জয়েন করার জন্য। আবার বাড়ি ফিরে গঙ্গার এপারে বসবাস ক’রে সুরছন্দের গানের স্কুল খুলেছেন। কানাঘুষা শুনছি নাকি গঙ্গার তীরে বাগানবাড়ি করেছেন? খুব সাবধান বলে দিলাম, দেখবেন পার্থ যেন না হ’য়ে যায়? ওখানে অপা এখানে দেখবেন সুখা ! মানে বুঝলেন না? সুখে থাকতে ভূতে খায়! গঙ্গা পারাবারে কখন কি হয় বলা যায় না? নৌকাডুবিও তো হ’তে পারে,তাই সাবধানের মার নেই। আপনি সঙ্গ ছাড়বেন না। উলু দিয়ে এনেছে আপনাকে হরিবোলে বিদায়ের অপেক্ষায় থাকুন। গিঁট বন্ধন যেন আলগা না হয়? আমি লাঙ্গলে ও হা হা হা হ করি হাল বাইতে। গরু পোষ মানে ও বুঝতে পারে দাঁড়াতে বলছে হা হ ক’রে। কিন্তু এখানে থামার জো নেই। আহা হা আ হা করে কাঁধে জোঙাল নিয়ে সব গরু তৈরি হচ্ছে কিংবা ভিখারী সাজিয়ে ভিক্ষা করবার কারবার, হাভাত হাভাত করছে যতো সব হাভাতের দল ? একটি গানের লাইন, তারপর শুধু চিৎকার হাহাহা করে হাহাকার ধ্বনি। ” পিয়াকে নজরিয়া হাহা হা হা তারপর যাদুভরি” যাদুভরা নয়নে প্রিয়ার পানে? আপনি দেখতে পান না কি চলছে এখানে? পাড়ায় কি মানুষ জন থাকে না নাকি? দিনরাত্রি হা হা আ হা চিৎকার।
আমাদের সময় আলকাপ গান ছিলো মাতিয়ে দিতো সব! সে সব গানে কোমড় হেলিয়ে দুলিয়ে দিতো। আলকাপের ছুঁকড়ি মাজা হেলিয়ে গাইতো ” প্যার কি এতো ডরনা ক্যা জব, প্যার কি এতো ডরনা। আর তবলার ডুগির শব্দে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা। আর এখানে না আছে ছন্দ না আছে লয় , এশুধু প্রেমের প্রলয়।
আপনি বলবেন সুখ চাঁদ বাবুকে টাকা পয়সা নিয়ে এইসব ছেলে মেয়েদের মাথা খাবেন না? যেমন গানের ছিরি তেমনি স্কুলের ছেলেমেয়েদের ছিড়ি। সব কানাবক,গান নিয়ে চুলচেরা ছেঁড়াছিঁড়ি। কি সব এদের বাহাদুরি। হা ভগবান,হা ভগবান আরও কতো কি দেখবো? থুড়ি, এই যা আমিও তো হা হা ভগবান বললাম। এই গান বাজনা খুব ছোঁয়াচে রোগ। সুর ও ছন্দ,তাল ও লয় এই যোগে বিয়োগে প্রায়শই ভুল হয়।
বেকার, শিল্পে হাহাকার, চোরদের জয়জয়কার, সবেতেই ইকার আকার হা হা কার শব্দ।