অক্টোবর ২৮, ২০২৪

বই পরিচিতি

নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কবিতাকে দেখি আবৃত্তি’র ঢঙে । কবিতায় খুঁজি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের কথামালা। সাধারণ মানুষের জীবনের রোজকার যুদ্ধ । অসামান্য বর্ণনা, নিটোল ব্যাঞ্জনা, অসাধারন শব্দের স্থাপত্য শৈলী কথা, চমৎকার বাক্যবশ এবং কবিতার টুইষ্ট এন্ডিং। অনেকের কবিতা হয় – কিন্ত কবিতা স্পর্শ করে না । কারন প্রাণ নেই – কবিতায় প্রাণ দিতে হয় – প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয় । কাব্য প্রাণই স্পর্শ করে কবিতার পাঠক হৃদয়ে । কবিরা কবি হবার অদম্য প্রত্যয় নিয়ে কবিতা চর্চা করেন।

নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে’ যৌথ কাব্য গ্রন্থে তেরো জন কবির কবিতা সমাদৃত হয়েছে । সবাই কবিতায় নতুন স্বাদ আবিষ্কার করবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হাটতে চলার চেষ্টা করেছেন। ইতোমধ্যে অনেকের কবিতা পাঠকের মনে সৃষ্টি করেছে চমকের ক্ষুধা । সেই ক্ষুধা মেটাবার মোকাবেলা করার ব্যক্তিগত দায় থেকে কবিতা লিখে চলছেন অনেকেই । মননশীল কবিতা হয়েছে অনেক ।

কবি আজিজুল হক এর কবিতায় ফুটে উঠেছে জীবনের উপলব্ধি, সৃষ্টি – স্রষ্টার লক্ষ্য ও উদ্যেশের প্রতি প্রতিবাদী তীর
“একা এক ক্লান্তিবিহীন শূন্যতায় নির্বাচনী ইশতেহার গুলোতে আগুন
জ্ব¦লিয়ে ভগবান নামক অজুহাতের মুখে ছুড়ে মারি”

এক কথায় মনস্তাত্বিক ও আধ্যাত্মিক লেখার ভিতর দিয়ে কবি আইয়ুব আকন্দ বিদ্যুৎ মানুষকে নিয়ে যেতে চান শুদ্ধতম পথে-
“তোমার সুন্দর সময়ের গান থেমে গেলে তবুও তোমাকে দৌড়াতে হবেই
কেননা ঈশ্বর পছন্দ করেন এই দৌড়”

নিপীড়িত মানুষের আদিম অনাবৃত জীবন জিগ্যাসার মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণে কবি সাঈফ ফাতেউর রহমান সন্মোহিত হয়ে সৃষ্টি করেন কবিতার করুন এলিজি –
“মূর্খদের সঙ্গ উপভোগ করে পাতক ঘাতক
মূর্খেরাই আধুনিক ঔপনিবেশিকের ক্রীতদাস
মূর্খতা বিবিধ প্রকারে ও প্রকরণে দাসানুদাস”

কবি ড. পৌলমী চক্রবর্তী কবিতায় নিজেকে নির্মল করে চলেছেন প্রতিনিয়ত –
” মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে তোমার সঙ্গে দেখা,
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে আমরা বন্ধু,
পাশাপাশি মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত ওপরে তুলতে তুলতে কখন যেন পরস্পরের হাতও ধরেছি”

নির্যাতিত মানবাত্মার মুক্তির কামনায় কবি শাশ্বত মনির রচনা করেন কালের গভীর উপলব্ধি –
“বিশ্ব বিবেককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
কলঙ্কের কালিমা থেবড়ে দেয় নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষেদহীন মুখে কারও কিছুই বলার নেই
এমন সংঘ কতটা জরুরি আর”

বন্ধুত্বের স্বপক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন কবি নাজিয়া আফরিন, সার্বজনীন সত্যি নির্ভেজাল বন্ধুত্বের বন্ধন –
” জেনে রেখো, শোধ আর বন্ধুত্ব কখনও এক হয়না,
বন্ধুত্ব না থাকলেও শোধটা কিন্ত আসেনা,
যেখানে প্রতিযোগিতা আর প্রতিহিংসার বেড়াজাল,
সেখানে অপরাজিতা ফোটে না, ভুলেও চিরকাল”

কবি হাজেরা ইয়াসমিন এর রচিত কবিতা মুখ্যত নির্মান করতে চান শিকড় সন্ধানের ইতিহাস –
“বারবার চক্রাকারে আসবো
মরু বিশ্বকে সতেজ করতে।
অঙ্কুরোদগম হবে বটবৃক্ষের।
বাড়তে থাকবে সাগরের নীল,
বাড়তে থাকবে বটবৃক্ষ।
তারপর নির্ধারিত সময়ে হারিয়ে যাবো মহাকালের অতল গহ্বরে “

পুরোটা শরীর জুড়ে ভালোবাসার টান, ছোট ছোট স্বপ্নের কৌতূহল কবি ইউসুফ ইকবাল জুয়েল এর লেখায় পরিস্ফুট হয়েছে –
“আচ্ছা, আমার মতো তোমারও কি ব্লাড সুগার বাড়ে?
আমার উপর যতটা ভরসা রাখতে পারনি
ইনসুলিনের উপর কি তার চেয়ে বেশি আস্থা তোমার?
হাঁটু আর মাইগ্রেনের ব্যাথায় কি নিয়ম করে ওষুধ খাও?
নাকি ভুলে যাও আমারই মতো”

কবি মো. সিফাত হোসেন এর কবিতায় রঙের দুনিয়ার ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে শূন্যতার বলয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে তোলবার আকুতি-
“এ শহরে মরা মানুষ মৃত নয়
এ শহরে জীবিতদেরই যত ভয়।
শহরের দেয়াল জুড়ে
স্মৃতি হত্যার হাহাকার জেগে রয়”

কবি তামজিদ আহমেদ ইমন এর কবিতায় ফুটে উঠে মাটি ও মানুষের প্রতি তীব্র আসক্তি
“সবুজের ক্ষরা চললে এভাবে একদিন পৃথিবী হবে মরুভূমি,
মানবজাতির অস্তিত্ব হবে বিলীন, থেকে যাবে শুধুই ভূমি”

কবি প্রিয়াংকা নিয়োগী কবিতা চর্চা বিলাস এর পাশাপাশি , প্রেমেরও দায় তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন –
“প্রেমের পরশমণি যখন তোমায় ঘিরে ধরবে,
সমস্ত খারাপ বাঁধন ছেড়ে তুমি বের হবে নিজে নিজে।”

কবি হারুন অর রশীদ কবিতায় কাদা জল ছেনে বেড়ে ওঠা সাধারণ মানুষের সম্প্রীতি আর সৌহার্দে আকন্ঠ নিমজ্জিত স্বতন্ত্র মননের প্রাণপুরুষ বোঝাতে চেয়েছেন সবুজ বাংলাকে –
“এদেশ আমার এদেশ তোমার
মধুমাখা ধুলো বালি,
বসন্ত ছোঁয়ায় অপরূপা বাংলা
একটি রূপের ডালি”

হৃদয় লোহানী / আমি অর্থাৎ আমার কবিতার কথা আমি নাইবা বললাম । জীবন যন্ত্রনার সমীকরণ খুঁজতে খেয়ালের বশেই লেখার জগতে প্রবেশ। মূলত মাটি ও মানুষের কবিতায় হাত আমার । কবিতাকে সত্যিকার কবিতা হিসেবে দেখতে চাই । কর্পোরেটদের অনবরত অত্যাচার মুক্ত রাখতে চাই কবিতাকে । কবিতায় রাখতে চাই শ্রীশোভা লক্ষ্মী । যে কবিতা চিত্রের প্রসার ঘটাবে – জীবন অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তুলবে – অশ্রুজল ভারাক্রান্ত এলিজি – পাঠককে কাতর করবে নিটোল কবিতার রুপাবয়বে।

সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি গভীর মমত্ব বোধ থেকে এই যৌথ কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে । আগামীতে মননশীলতার ছাপ আরো পরিশালীত হবে ।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সম্পাদক হারুন অর রশীদ এবং প্রকাশক- শাশ্বত মনির এর প্রতি।
পাঠক মহলে বিশেষ বিনয় আবদার বইটি পড়ুন, সমালোচনা করুন এবং পাশে থাকুন।
বিঃদ্রঃ- ‘নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে’ যৌথ কাব্য গ্রন্থটি একটি আবৃত্তি নির্ভর কাব্য গ্রন্থ। পাঠক এবং শ্রোতাদের জন্য খুব শীঘ্রই এই গ্রন্থের কবিতাগুলি আবৃত্তি অডিও ভিডিওরুপে প্রকাশিত হবে । শুভ কামনা ।

হৃদয় লোহানী

কবি ও বাচন শিল্পী

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *