সালাম বোম্বে
সালাম বোম্বে
সেক রজব আলি
বোম্বে অধুনা মুম্বে আমাদের গর্বের শহর ভারত দেশের অর্থের রাজধানী।
কত দামী দেশী বিদেশী গাড়ি নামি ব্যক্তি উঁচু উঁচু ফ্লাট বাংলো বাড়ি,
আরব সাগর সৈকতে জুহুচোপাটি, সমুদ্রগর্ভে পাহারারত হাজিআলি দরগা শরীফ, ইতিহাসের সাক্ষ্য ইন্ডিয়া গেট, সান্তাক্রুজ বিমানবন্দর, কত বলিউডী তারকাদের বিলাসী জীবনের বিচিত্র জীবনযাত্রা, গ্লামার কুইন্দের রকমারি রূপচর্চার কাহিনী, এ সব যতসব পুরানো কিংবদন্তিকেও হারমানায় আমাদের বোম্বে।
রূপে ঐশ্চর্যে সম্পদেভরা এই বোম্বের বুকেতেও আবার দেখলাম দুমুঠো খাওয়ার জন্য দীর্ঘ লম্বা লাইনে ক্ষুধার্তদের অপেক্ষা!
দুটো রুটি অথবা এক প্লেট ভাতের জন্য লাইনে আছে নারী মহিলা আছে বৃদ্ধ আছে শিশু আছে হিন্দু মুসলমান শিখ খ্রিস্টান সবাই।
তাদের বুভুক্ষু মানুষদের অধীর অপেক্ষা শুধুই সামান্য একটু অন্য।
জ্বলন্ত ক্ষুধা যন্ত্রণার নিবারণ।
ভুখা পেটের কঠিন জ্বালায় সব ভূলা মানুষগুলো তাই চায় শুধুই ক্ষুধার নিবৃত্তি।
ক্ষুদার্থ পেটে নিজেরা খাবে হয়তবা অদূরেই বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মা বাবা অথবা প্রাণ প্রিয় শিশুটিকে খাওয়াবে।
তারা এখন লিঙ্গ জাত ভেদে সবাই এক লাইনে।
তখন তাদের কাছে ধর্মের বৈষম্য ছিল না বর্ণের ভেদ ছিল না লিঙ্গের পৃথকীকরণ ছিল না।
ক্ষুধার আগুনে সব বৈষম্য পুড়ে ছাই হয়ে গোটা শরীর মন জুড়ে ধুমায়িত ছিল শুধুই “ক্ষুধা”।
তারা সবাই ছিল একটাই শ্রেণী, একটা লাইনে, তারা ছিল “ক্ষুদার্থ”।
কিন্তু এই ক্ষুধা নিবারণের ব্যগ্রতার নিস্তেজ নিস্তব্ধতার শৃংখলার মাঝে সব কিছু ভেঙ্গে কে যেন সুৎনামির ঢেউ তুলে পবিত্র নামের অপব্যবহার করে বলে উঠলো ” জয় শ্রী—–বল, বারনা খানা নেহি মিলেগা”।
তারা সবাই চমকে উঠলো লাইনসুদ্ধ খোদাতুর মানুষের দল।
সোশ্যাল মিডিয়ার ঝলসানো ক্যামেরায় বন্দি হলো এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার নিন্দনীয় ভিডিও ছবি। মুহূর্তে ভাইরাল হল চতুর্দিকে।
চমকে উঠল গোটা দেশবাসী সাথে সাথে শত শত বিদগ্ধ মানুষেরা।
তারা বলে ক্ষুদার্থ মানুষের আবার জাতি কি ধর্ম কি?
ক্ষুধা নিবৃত্তিতেই আছে আসল ধর্ম।
কারণ মন্দিরেও প্রসাদ চড়ে ।
পীর সিন্নি খায়। ভগবানও ভোগ খায়। বলি চায়। আল্লাহ চায় কুরবানী।
তাইতো বলি হে’ বম্বে সম্পদে ঐশ্বর্যে তুমি অতুলনীয়, তবে সালাম তোমার শ্লোগানের অপব্যবহারকে।