অক্টোবর ২৭, ২০২৪

পথে হবে এ পথ চেনা

চন্দ্রাবলী মুখোপাধ্যায়

এই ‘হয়তো’ শব্দটার চক্রব্যূহ থেকে না বেরোলেই নয় একে বরং হতেই হবে’ শব্দটা দিয়ে একে রিপ্লেস করা যাক । আকস্মিক অগ্নুৎপাতের মতো ঘৃণ্য অপরাধ আগেও হয়েছে কিন্তু এবার বুকের মধ্যে শেল বড় জোরে বিঁধেছে । খাবারে বা বিশ্রামে বড়ো অনীহা । বারবার মনে হচ্ছে এ অন্যায়, এ অন্যায় , এ অন্যায় । প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাহাকার । কুকুরের সঙ্গে ভারতীয়দের তুলনা, তাদের এ হেন বৈষম্যনীতি , আমার নিজের শহরের দুর্বিষহ অবস্থা মূঢ়ের মতো শুধু দেখছি ।

সাপ -কে শামুক গিলতে দেখেছি । একটু একটু করে একবার গিলতে আরম্ভ করলে সে কোনো মতে ছাড়ে না । তেমন করেই কোন সংস্কারের বা ন্যায় বিচারের অধিকার পাওয়ার সংকল্পে ভাটা এনে অক্ষম হ’লে চলবে না । বাধা কিংবা শিথিলতা এলে জেদ যেন আরো বাড়তে থাকে ।

‘হয়তো’ শব্দের ভার বড়ো লঘু। একটা সম্ভাবনার কথা আউড়ে যায় । কিন্ত সময় বিরূপ। এখন ‘নিশ্চয়তাই’ দায়বদ্ধ । আর আমাদের কাঁধে সেই গুরুদায়িত্ব ।

স্বামীজীর কথায় সংস্কার ‘স্ব’ থেকে অর্থাৎ নিজের থেকে শুরু । নিজেকে আগে নিখুঁত করি তারপর অপরের ঠিক-ভুল বিচার । তাই এখানে বেশী কথার দরকার নেই। মনুষ্যত্ব যেখানে লুট হয়ে যাচ্ছে সেখানে নারায়ণ বা নারায়নী সেনা কাউকেই দরকার নেই ।

অনুভূতি বিহীন মানুষের পদের উন্নতি হচ্ছে কিন্তু তাদের বিবেকের অধোগতি হচ্ছে সুনিশ্চিত ভাবে । পরের কাঁধে ভর দিয়ে স্বজাতিকে নীচু করে দেখছে। তাদের প্রতি অবিচার করছে ইচ্ছাকৃত । দম্ভ কী সাংঘাতিক। তাই না ? এতে কার মঙ্গল হচ্ছে? আপনার না আমার?

ভারতবর্ষের ঐতিহ্য আছে। শক্তি আছে। বিশেষত্ব আছে । আর তার পরিপূর্ণ বিকাশেই আমাদের দেশমাতৃকার সার্থকতা । প্রাচীন ইতিহাস পড়ে এইটা যদি আমরা না শিখে থাকি তবে যে সব…. সমস্ত কিছু ভুল শিখেছি । আসুন আমি, আপনি সবাই ভারতবর্ষের অন্তর খুঁড়ে দেখি। মা-কে দেখি, বুঝি, ভাবি । এর দিকে মুখ ফেরাই । অশিক্ষা, চৌর্য্যবৃত্তি, মিথ্যাচারিতা, ভন্ডামি সব ভেতর থেকে উপড়ে ফেলি ।

ভারতবর্ষ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র, আমার বিবস্ত্র শহর একটা বিশেষ রঙের সুতো ক্রমাগত বুনে চলেছে । সেই সুতো যে কতো সুক্ষ এবং কতো নিগুঢ় তার সারবত্তা উপলব্ধি করা একান্ত বাঞ্ছনীয় ।

একদিন ঠিক আসবে ….আমরা বাড়ীর খোলা জানালা দিয়ে নতুন সূর্য দেখতে পাবো । সেই জন্য সমুদ্রপাড়ে বা টাইগার হিলে দৌড়োতে হবে না ।

ধর্মের দুটি ভাগ । স্থূল ও সুক্ষ । এই দুটো অংশকে আমরা এখনো পূর্ণভাবে স্বীকার করতে পারি নি। তাই যারা সুক্ষকে আপন করতে পারে না তারা স্থূলের আশ্রয় নেয় । এরা অজ্ঞান, অনুভুতিহীন। আর ঠিক এদের মানসিকতায় বিভিন্নতর অদ্ভুত বিকার ঘটতে থাকে ।

আমার শহরের , আমার রাজ্যবাসী-র চেষ্টার মধ্যে এক গভীর ঐক্য পাকে পাকে জড়িয়ে উঠেছে। কোনোরকম রঙবিহীন সে ঐক্য-বিপ্লবে তাদের সঙ্গে এক দলে মিশে শহরের ধুলোয় গিয়ে বসতে আমার মনে বিন্দু মাত্র সংকোচ নেই ।

দেখতে পাই ভাগীরথীর ঘাটে কতগুলো নৌকোয় আলো জ্বলছে আর কতগুলো দীপহীন । আর ঠিক তার ওপরে বৃহস্পতি গ্রহ অন্ধকারের অন্তর্যামীর মতো অনিমেষ দৃষ্টিতে স্থির হয়ে আছে।

সংকল্প দিয়ে আমি , আপনি নিজেদের জীবনকে আগাগোড়া বিধিবদ্ধ করে মনে মনে সাজিয়ে নিতে চাইছি । এই বলে বলীয়ান হয়ে মুঠি দৃঢ় করলেই উজ্জ্বল নম্রতায় , তিলোত্তমার কোমল দুটো স্নিগ্ধ চোখের আকুল বার্তা আমাদের মনের মধ্যে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এগিয়ে দেবে । এখন আমাদের সম্মিলিত ধৈর্যের পরীক্ষা । আর একে অপরের সঙ্গে বেঁধে থাকা ।

রাখী -পূর্নিমা বিগত । কিন্ত তাতে কি যায় আসে? আরো একবার ভাই-বোন নির্বিশেষে হোক না অঙ্গীকারের রাখী-বন্ধন ।

অক্টোবর ২৭, ২০২৪

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *