ধূমার উপকারিতা
ধূমার উপকারিতা
অরবিন্দ সরকার
ভোম্বল গ্রামের ছেলে। বাড়ীর সামনে গোয়াল ঘর। অনেক গরু মোষ ভেড়া ছাগলের সহাবস্থান ওই গোয়ালঘরে। খড়ের ছাউনি,ভোম্বলদের বাসবাড়ী ও গোয়ালঘর। দিনে মাছি ও রাত্রে মশার উপদ্রব। বিকেল বেলা থেকেই গোয়ালে সাঁজাল মানে ধূমার ব্যবস্থা করতে হয়। না হলে বিকেলে ডাশ মাছি ও সন্ধ্যায় মশার উপদ্রবে গোয়ালের জীবদের ছটফটানি শুরু হয়। মানুষের মশারী আছে তারা বাঁচে।
ভোম্বল গোয়ালঘরে একটি বাপের পকেট থেকে চুরি করা বিড়ি ধরিয়ে টান মারলো। গোয়ালের ধূমা আর বিড়ির ধূমা ভোম্বলের পেটে ঢুকতে শুরু করেছে।
এই সময় ভোম্বলের নতুন বউ সন্ধ্যার প্রদীপ ও ধূপবাতি নিয়ে গোয়ালে প্রণাম সারতে দেখে তার বর ভোম্বল বিড়ি টানছে। ভোম্বলের বউয়ের নাম সন্ধ্যা । সন্ধ্যা বললো এই তোমার কারবার। দাঁড়াও সবাইকে বলছি তুমি বিড়ি খাও।
ভোম্বল বললো – তুমি একটু বুঝতে শেখো। আমি কি রোজ খাই নাকি? গোয়ালে ধূমা দিলে যেমন মশা মাছি পোকা মাকড়ের উপদ্রব কমে,তেমনি বিড়ি খেলে আমার ভেতরের ক্রিমি পোকা তার মৃত্যু ঘটবে! এজন্যই ভেবে আমি খেলাম।
সন্ধ্যা বললো – তাহলে তো আমার খাওয়াও উচিত।
ভোম্বল – ছিঃ ছিঃ মেয়েদের এসব খেতে নিষেধ। তুমি পান দোক্তা খেতে পারো।জর্দা দিয়ে পান খেতে পারো। মুখের গন্ধও পালাবে আর সুঘ্রাণ ছুটবে।
সন্ধ্যা – বিড়ির প্যাকেটে সতর্কবাণী লেখা থাকে। ধূমপান ক্যানসারের কারণ। তুমি তবুও খাচ্ছো।
ভোম্বল – এ জন্যই মেয়েদের অবলা বোকা জাত বলে? তোমার জ্ঞান হচ্ছে না – আমি বিড়ি পুড়িয়ে খাচ্ছি,মানে ক্যানসারকে পুড়িয়ে তার দফারফা করছি। বাবা তো জন্মাবধি খেয়ে আসছে,তার কি ক্যানসার হয়েছে? বরং তোমার বাবা বিড়ি না খেয়েও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
সন্ধ্যা – তা ঠিক! আমার বাবা না খেয়েও ক্যানসারে মরেছে। একেবারেই সত্যি কথা গো।
ভোম্বল – আমি কি তোমাকে মিথ্যে কথা বলবো বলো। উলু দিয়ে তোমাকে এনেছি একেবারে হরিবোলে ছাড়বো। আমি তোমার আগে মরবোই না।
সন্ধ্যা – ঠিক বলেছো গো! শাঁখা সিঁদুর পড়ে যেন আমি যেতে পারি। তুমি তবে দু একটা খেয়ো বিড়ি মাঝে মাঝে। আমার খুব গন্ধ লাগে?
ভোম্বল – ঠিক আছে এবার বিড়িতে জর্দা ও কর্পুর মিশিয়ে খাবো, দেখবে ঘরটা মৌ মৌ করবে। তাড়াতাড়ি যাও বাবা মা তোমার খোঁজে আবার না আসে? তেজপাতা তরকারি, পায়েস, পোলাও তৈরিতে লাগে। কারিপাতা তরকারির স্বাদ বাড়ায়। ধনেপাতা স্যালাড তৈরীতে। আর বিড়ি পাতা ঔষধি ধূমপানে। দেখো এতে কেমিক্যাল নাই! পাতা মশালা সূতো সব প্রাকৃতিক, এর ভেষজগুণে সমৃদ্ধ। ঈশ্বরের সৃষ্টি এসব। মুখ দিয়ে টেনে নাক দিয়ে বের হয়। ভেতরের জানোয়ারেরা বিড়ির ধোঁয়ায় ছটফট করতে করতে অসুরের মতো মরে। খনার বচনে লেখা আছে – বুদ্ধির গোঁড়াতে ধূমা দাও। এ জন্যই মহামতি মহাজন পূর্বপুরুষের কথা মেনে চলা উচিত। পৃথিবীতে সুখ কোথাও নেই কিন্তু বিড়িতে সুখটান রয়েছে।
সন্ধ্যা – ঘাট হয়েছে গো ঘাট হয়েছে। তোমার ঘটে এতো বুদ্ধি আমি আগে জানতাম না গো!!