কিপটে বর !

কিপটে বর !
তাহ্ মিনা নিশা
দুনিয়ার সব কিছু কিনতে পারে, শুধু আমাদের খাট আর লেপ কিনতেই তার যতো অনীহা। কতবার বলেছি,
— খাট না কিনে দাও, অন্তত শীতের লেপটা তো কিনতে পারো।
তা কে শোনে কার কথা? সেই সিঙ্গেল সাইজের লেপ! শীতের মধ্যে কষ্ট করে এক জায়গায় জড়সড় হয়ে আমাদের দুজনকে থাকতে হয়। কখনো যদি ঘুমের মধ্যে কেউ একজন লেপ নিয়ে একটু দূরে সরে যাই, তো অন্যজন আলগা। তাই যতোটা সম্ভব ঘুমের মধ্যেও সচেতন থাকতে হয়, অন্যজনের যেন শরীর থেকে লেপ সরে না যায়, এটা ভেবে। কি জ্বালাতনের কথা বলেন, শীতের রাতে লেপের কষ্ট কি আর সহ্য হয়!
এবার আসি খাটের প্রসঙ্গে…. আমাদের বিয়ের বছর চারেক পর আমরা বাবা-মায়ের বাসা ছেড়ে নিজেদের ছোট্ট নীড় গড়ি। সাথে আমাদের ছয়মাসের ছোট্ট রাজকুমারী “রোজা”। তখন সিঙ্গেলের চেয়ে একটু প্রশস্ত ও ডাবলের থেকে সামান্য ছোট সাইজের একটা খাট কিনে সংসার শুরু করি। রোজামণি ছোটো,তাই খাটের পাশে একটা চ্যাপটা বেঞ্চ লাগিয়ে খাটটাকে একটু বড় করা হয়েছিল।রোজা তার দাদুমনির কাছে থাকতে শুরু করলে খাটের পাশ থেকে বেঞ্চটা সরে গেল। আবার সাড়ে তিন বছর পর রিজয়ের আগমনে সেই বেঞ্চেরও আগমন হলো। বাচ্চারা এখন যে যার রুমে আধুনিক মডেলের ডাবল বেডে ঘুমায়। কিন্তু আমার কপালে ২৫ বছর ধরে সেই সেমি ডাবল খাটই বরাদ্দ আছে। সবই আমার এই চার আঙ্গুল কপালের লিখন আর কি! কপালে কিপটে বর থাকলে তার ভোগান্তি তো ভুগতেই হবে!
কিছুদিন আগে রোজা-রিজয়ের পাপা যখন অসুস্থ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের কেবিনের বিছানায় শুয়ে ছিল, তখন সে আমাকে কাছে ডাকলো। বলা বাহুল্য,ডক্টর সাহেব জীবনে এই প্রথম রোগী হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। সে যায় হোক, আসল কথায় আসি। আমি তার কাছে গেলে,সে আমার কাছে জানতে চাইল,
—আজ তুমি কোথায় ঘুমোবে?
আমি পাশের সোফা দেখিয়ে দিয়ে বললাম,
— ঐখানে।
আমার হাতটা তার ক্যানোলা লাগানো হাতের মধ্যে ধরে মৃদু স্বরে বলল,
—আজকে তোমার বহুদিনের একটা অভিযোগের উত্তর দিব, শুনবে?
কথাটা শুনে আমি তো হতবাক!
— অভিযোগ ? আমার? আমার কোনো অভিযোগ নেই তো!
সেই সময় খাট কিম্বা লেপের প্রসঙ্গ আমার চিন্তাতেই আসে নাই! তাই আমাকে অবাক করে দিয়ে সে যে এমন সময়,এই বিষয়ে কথা বলতে পারে, সেটা এক মুহুর্তের জন্যেও কল্পনা করিনি।
— বাসায় এতগুলো ডাবল সাইজ ব্লাংকেট থাকা সত্বেও আমরা সেই সিঙ্গেল লেপ ব্যবহার করি, আর বাচ্চাদের ডাবল বেড থাকলেও আমাদের সেমি ডাবল বেড। এর একটাই কারন- তোমার কাছাকাছি থাকা। যেন রাগের মধ্যেও তুমি আমার থেকে দূরে যেতে না পারো। আর সেই তুমি কি পারবে আমাকে একা রেখে সোফাতে…..
আমি তার আর সেই কথা কমপ্লিট করতে না দিয়ে, তার সাথে সেই পেসেন্ট বেডে স্বাচ্ছন্দে ও সানন্দে ভাগ বসালাম।