একটি কুঁড়ি দুটি পাতা
একটি কুঁড়ি দুটি পাতা
[চা বাগান শ্রমিকের প্রতি উৎসর্গ]
পারভেজ শিশির
এক রকম হাতের গল্প শুনবে তোমরা?
আমার কাছে আঙ্গুলের গল্প আছে—
একই নিয়মে ভোর হলে’ও
পাহাড়ী ঢালে আটকে থাকা, সূর্যের ব্যথিত প্রহরে,
যে আঙ্গুলগুলো সমব্যথী হাতের আশ্রয় খোঁজে…
সত্যিই কত বিচিত্র সব হাত—
যেন কোনো চিত্রাশিল্পীর ক্যানভাসে,
নানা রঙ নিয়ে অঙ্কণ খেলায় মেতেছে,
সে হাত ড্রইং রুমের টেবিলে
চায়ের কাপের জলসা সাজায়,
যে হাতগুলো কেবলই বিদেশী মুদ্রা ছাপে…
কিন্তু, জানো? সে সব হাত কোনোদিন হাসে না
সবগুলো আঙ্গুল বিষণ্ণ,
ভোঁতা হয়ে যাওয়া স্বপ্ন নিয়ে
তাঁরা ঘুমিয়ে যায়, ভর সন্ধ্যায়…
তারা কোনোদিন সমুদ্র বিলাস করে না—
তাদের কাছে মেঘছোঁয়া পাহাড়ই বিনোদন,
রোদপাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি
তাদের বিনে পয়সায় গান শুনিয়ে যায়,
মহুয়া ফুলের গন্ধেই যাদের মন দোল খায়…
হাতগুলোর এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই
সামান্য চিকিৎসার পথ্য,
আর দিন গেলে বাইশ কেজি পাতার জন্যে
মাত্র একশো সত্তর টাকা—
এই দিয়েই হাতগুলো বেঁচে থাকে…
মাথার উপরে ফাঁকা আকাশ
আর গরাদবিহীন জেলখানায়
তারা কয়েদির মত বেঁচে থাকে…
… কিন্তু আস্ত একটা মানুষ—
কাগজ কলমে যার নাম স্বাক্ষরে,
রপ্তানি হয়ে যায় হাতগুলোর কুণ্ঠিত স্বপ্ন—
বড্ড অসুখী হাতের অসন্তুষ্ট আঙ্গুলগুলো,
কেবলই ম্লান মুখে সূর্য ডোবা দেখে
সে চোখে মুগ্ধতা নয়, কেবলই অনুর্বর দিনের ক্লান্তি…
কোথায় থাকে এসব পূর্ণদৈর্ঘ্য মানুষেরা,
যারা একটি কুঁড়ি দুটি পাতার গান শোনায়…!
যাদের বৈভবের উজ্জ্বলতায়
হাতগুলোর মুখ দিন দিন কালো হয়ে,
আফ্রিকার কালো চামড়াকে’ও হার মানায়…!
সেই সব দুঃখিত হাতগুলো আর
কিছুতেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে না…
এমনই তরঙ্গে ওঠে নামে হাতগুলো
যেন কত না আনন্দে চলছে স্বপ্নের জাল বোনা,
পাহাড়ি ঢালের গড়িয়ে যাওয়া যাত্রায়—
আদতে হাতগুলোর, মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নেই,
তাদের কোনো স্বপ্ন থাকে না…