অক্টোবর ২৭, ২০২৪

আমার গ্ৰামের কথা

0

আমার গ্ৰামের কথা
জে এফ আইরিন

খন্ড খন্ড সাদা সাদা মেঘ পুঞ্জ মেঘের উপর দিনান্তের সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে। মাঠে পেকেছে বরো ধান চাষীদের তোড়জোড় বন্যার সময় পাশের দেশে খুব বৃষ্টি হয়েছে সেখানে অথৈয় জলে ভেসে গেছে ধান। রাঙা সূর্য আর রাঙা ধানে সোনার মতো অপূর্ব বিমুগ্ধ নয়ন জুড়ানো দৃশ্য কামরাঙা মতো রঙ ধরেছে মাঠের কিনারায়।
ভাদ্রমাসের প্রথম সপ্তাহ আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু করেছে শরৎকালের। নীল নীলিমা আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো নরম মেঘ দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সবুজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে কারা যেন দেখছে কিছু নামহীন পাখি ছটফটে চঞ্চল ওঠা নামা করছে মেঘের দেশে যেন আপ্লুত শোভিত উদ্যান গুচ্ছিত প্রকৃতির রূপ গ্ৰামে কানাই কানাই ছড়িয়ে।
গ্ৰামের শেষ বেলা দিনের অবসান ঘটছে বর্ণ ছটা ঘনঘটা চারিদিকে আস্তে আস্তে নামতে থাকে সন্ধ্যা বিলুপ্ত নীল আকাশ রহস্যের চাদরে ঢেকে দেয় যেন কেউ এসে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি মেঘের বর্ণালী সৌন্দর্য প্রকৃতির আঙিনায় ভরিয়ে তোলে।
ছোট্ট ছোট্ট চালা ঘর মাটির দেয়াল জ্বলে ওঠে প্রদ্বীপ পরস্পর বন্ধনে আবদ্ধ। ঝুপ করে নেমে আসে অন্ধকার রহস্যময় আস্তে আস্তে স্তব্ধতার নিবিড় গভীর নিরবতা আড়ম্বর হীন গ্ৰামের মানুষের জীবন চুপি সাড়ে তাঁরাও থেমে যায় নিয়ম করে। বাড়ে রাত ঘুটঘুটে অন্ধকার মাঠ হাহা করে কবর স্থান থেকে ওঠে শিয়ালের গভীর চিৎকার আকাশে গিয়ে ধাক্কা মারে ঝিঁ ঝিঁ পোকা দম নিয়ে নিয়ে ডেকে চলে একমনে ঘাস ফড়িং তাঁরাও গলা ছেড়ে গান শোনায় রাতের পরিদের। অদৃশ্য সেতু বন্ধন গ্ৰামের আঁধারের সাথে ঝিঁ ঝিঁ পোকার। গাছ গুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে চুপিসারে শোনে কোন দুঃখিনীর আত্মকথা জেগে বসে সেলাই করে । কাঁথার সুতোর ফোঁড়ে ফোঁড়ে গেঁথে যায় আনমনে জীবন যাপন আর আভাবের সেই মর্মে মর্মে বেদনার সুর। বিস্তর গ্ৰাম দ্বন্দ কলহ মিটিয়ে ঘুমের দেশে একে অপরের আত্মার বাঁধনে আগলে থাকে চিরকাল।
শীতল বাতাস নেতিয়ে পড়া শরীরের মধ্যে শিহরন অনুভব করে।


আস্তে আস্তে স্তব্ধতার নিবিড় গভীর রাত কেটে উদিয়মান সূর্য রাঙিয়ে ওঠে কপালে সিঁদুর রঙের একটা টিপ পড়ে। শিশির ভেজা ভোর মুক্তকোণা ঝিকমিক করে পুকুর পাড়ে ওঠে দুলে দুলে বাঁশ বন, শালিকের গাঢ় ডাক ডাহুক পাখিদের গান কূজন মেশানো সুরেলা সুর নরম হাওয়া বয়ে যেতে যেতে বলে চুপি চুপি কতকথা।
উঠোনের লাউমাচা পুঁই শাকের লকলকে ডগা কেমন যেন হাসি হাসি মুখ করে থাকে। ফুল আকাশ মাটি ঘাস নিত্যনতুন সুখ দুঃখের তাঁরাও ভাগিদার গ্ৰামের মানুষ গুলোর সাথে। নতুন পাতা গজানো কুল গাছ গুলো সট্যান দাঁড়িয়ে দুলে দুলে ওঠে সকালের বাতাসে। ঘোষানী গরু ছাড়ে আর গলা ছেড়ে চিৎকার করে কতকথা বলে বকবক করে। বলরাম কাকা মোদির দোকান খুলে আর সাত সকালে মিঠুদাদু চুলোতে আঁচ দেয় আর খকখক করে কাসে হাঁপানি রোগ পঞ্চাশ বছর ধরে চা বিক্রি করে। সকালের আচেঁর ধোঁয়া গোটা পাড়াটা অন্ধকার রহস্যময় করে তোলে কিন্তু তার মধ্যে থাকে সম্পর্ক জড়িয়ে কেও বিরক্ত হয়না।
সাদা সাদা কুন্দ ফুল গুলো বকের পাখার মতো ধবধবে ফর্সা। বটপাকুরের ছায়া ঘেরা বিশাল একটা গ্ৰাম। কৃষি জীবি মানুষের বসবাস। দূর থেকে ভেসে আসে হাঁস মুরগির ডাক মোরগ তো সে ভোরবেলা থেকে এমন গলা সাধে সংগীত শিল্পী
হাসি ভালোবাসাবাসি আনন্দে আত্মহারা শিশুদের পাঠ সকল কিছু নিয়ে আমার গ্ৰাম।
স্বপ্ন আঁকা নিকানো বড় উঠুন কাৎহয়ে সূর্যের আলো মেখে কেমন পবিত্র আলয় হয়ে ওঠে। কারো বিপদ হলে শোকা হত শোক নেমে আসে সবার মধ্যে হায় হায় করে ধূধূ করে হৃদয় গুলো যাদের মধ্যে এখনও প্রবেশ করেনি ততটা স্বার্থ। সেবার বিধবা আদুরীর ছেলের খুব জ্বর মাথায় জ্বর উঠেছে তো কপালে যখন জল ঢালছে দশজন ঘিরে ধরে বসে একটু খোকাটা চোখ খুলতে সবাই বলে উঠলো ঠাহর হয়েছে। কোন এক বাঁধনে আটকে থাকে একেঅপরের সহায়তা এভাবে চলতে থাকে যুগ যুগ ধরে।
সব কিছু খুল্লাম খুল্লাম কড়া নিয়মে চাবুকের ক্ষত এখানে স্থান পায়না তাই অল্পতেই এরা বড় সুখী। নিখাদ ভালোবাসা পদ্মের মতো স্নিগ্ধ পরস্পকে আঁকড়ে বেঁচে থাকতে ভালোবাসে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *