অনামিকা অরণ্যের গান
অনামিকা অরণ্যের গান
পারভেজ শিশির
তোমাকে আবার ফিরে পাবো ব’লে
স্বতঃদ্বিধাহীন কেবল
এমন পথে নেমে যাওয়ার ছল
আমি চিনিনে অথচ অবলা গাছপালাও
আমার কষ্টে দিশেহারা হয়ে
এদিক ওদিক দোলে…
কোনো এক বিস্মৃত শীতের প্রাক্কালে
হঠাৎ হিমেল বাতাসের ঝাপটায়
খেজুর পাতার ফাঁকে চিকন চাঁদ রাতে
তোমার আলিঙ্গন মনে পড়ে যায়
“কি হবে তুমি একটি বার ফিরে এলে…!”
শুধু আর মনে পড়ে না তোমার মুখ
যে মুখের চৈতী ঘামে
জেগেছিল রূপোলি গাঙ্গের ঢেউ ~~~
বুঝে না বুঝেই যেন কিভাবে
কারণে বা অকারণে সন্দেহের দোলাচলে
“আর কবে দেখা হবে মনের বারান্দায় !”
বহুমাত্রিকতায় মনের সমস্ত প্রকোষ্ঠ
বিনিময় হয়েছিল একদিন
তোমার এবং আমার সর্বক্ষণে…
তারপর সবখানেই আমাদের প্রেম
বিশুদ্ধ সবুজ শিশিরে সর্বাঙ্গ টলমল…
গাছের ঠান্ডা পাতায়,
“চোখের শিশিরে তোমার প্রতিবিম্ব দেখা যায় !”
সূর্যাস্তের কুসুম প্রচ্ছায়ায়
আশাবরী নদী জলের নিকষিত হেম
চেয়ে আছে যেন কেউ
অনাদিকাল স্মিতহাস্য সজল
ফুলের পাপড়ি, হলুদ পরাগরেণু, কুন্তল কুয়াশায়…
জীবন প্রাচুর্য্যের এত এত ভার
তোমার প্রেমের আমৃত্যু দানপত্র
“আর কবে তোমার একটু সময় হবে !”
অসম্পূর্ণ সামান্য দুটো পা আর
বইতে অপারগ হয়ে যায়, তারপর’ও
সে নিশ্চল হেটে হেটে
মায়াকাঞ্চণ অরণ্যে তোমাকে খুঁজে ফেরে…
তবুও তো ভালো কেউ না হোক অবশেষে
ভ্রমর পাখি ফড়িং মাঝে মাঝে
প্রজাপতি এসে এসে
যেন কী এক দূর্বোধ্য গৈরিক ভাষায়
তোমার কথা ব’লে ব’লে যায়…
আর তোমার মনমহুয়া
প্রযুক্ত করে প্রাণময় ক’রে
তোমার অনিবার্য অপেক্ষা
ধুলোমাখা দুটো ‘স্থলপদ্ম চোখ’
তোমার পান্ডুর মুখ স্মরণে রেখে
নিঃশেষে বিভাজ্য করতল মুঠো ক’রে
হেটে যায় অরণ্যে অতল শূন্যতা নিয়ে …
সেখানে সেই অচিহ্নিত
অনামিকা অরণ্যে কাঁচ-সবুজ
মখমলি ঘাসের তলায়
তুমি কোনো একদিন খুঁজে নিও
জ্বেলে প্রিয় নয়ন জ্যোতি
তোমার যুগান্তরি প্রাণময়ের নিঃসহায়
অকাতর নিঝুম সমাধি …